অন্য জগৎ

“There’s so many different worlds
So many different suns
And we have just one world
But we live in different ones”
আশে পাশে সবার স্কুল লাইফ নিয়ে এত কথা শুনে Dire Straits এর “Brothers in arms” এর এই লিরিক্স টা বার বার মনে পড়ে যাচ্ছিল। হয়তো আমি ভাগ্যবান, বা হয়তো গঙ্গা
পাড়ের এদিকের জগৎ টাই একটু আলাদা ছিল। যাই ছিল, আমার স্কুল জীবন ভীষণ অন্যরকমের ছিল।
অধিকাংশ ছেলেদেরই স্কুল লাইফ এ গ্রুপ থাকতো একটা করে। আমার সৌভাগ্য বা দুর্ভাগ্য বশত সেরকম কিছু ছিল না। তিনজন খুব ভালো বন্ধু ছিল আমার সেই সময়ে: সর্বেশ্বর, সমীরণ আর রোহন।
স্কুল লাইফ বলতে তাদের সাথে কাটানো সময় টাই মনে পড়ে শুধু। তিন জনের সাথেই সম্পর্ক একটু আলাদা ছিল।
সর্বেস্বর খুব সিরিয়াস ছেলে। পড়াশোনাই ওর ধ্যান জ্ঞ্যান। লাজুক স্বভাব এর জন্য সবাই ওকে লাল্টু বলে ডাকতাম। আমার আর সর্বের নাম্বার বরাবরই ১৯-২০, কিন্তু বন্ধুত্ব কোন মাপকাঠির রেখা দিয়ে মাপার উপায় নেই। এত সিরিয়াল, শোতে দেখতাম বন্ধু দের মধ্যে কত রেষারেষি অথচ আমাদের মধ্যে সেইটা একদমই ছিল না। উল্টে একে অপরকে অঙ্ক, ফিজিক্স এ সাহায্য করে গেছি বরাবর সাধ্যমত। কোনোদিন কোন দুর্বলতা নিয়ে ইয়ার্কি করিনি একে অপরের। কলেজ লাইফ এ উঠে একটু অবাক হয়েছিলাম অনেককে সেইটা করতে দেখে।
এবার আসি সমীরণ এর কথায়। একদম সাদা মনের ছেলে। এতটাই সাদা যে মাইন্ড টু মাউথ ফিল্টার টাও উধাও। মাথায় যা আসে সোজা মুখে বলে ফ্যালে। মোটামুটি প্রতিদিনই আলটপকা কথা বলে বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা সমীরণ এর নিয়ম ছিল। টিফিন টাইম হলেই অধিকাংশ দিন ওর সাথে তর্ক জুড়ে যেত শাহরুখ আর আমির খান নিয়ে। যা শেষ হতো মাঝে মাঝে হেড স্যার এর ধমক শোনার পর। ওর মতন এন্টারটেইন খুব কম লোকই করেছে স্কুল জীবনে। ব্লু টুথ এ কুমার শানু আর উদিত নারায়ান এর গান দেওয়া নেওয়ার সঙ্গীও ছিল সেই সমীরণই।
রোহন আবার আমার মতনই কট্টর ফুটবল সমর্থক। আমি ইস্টবেঙ্গল, ও মোহনবাগান। ডার্বি হারি বা জিতি, আমাদের ঝামেলা এবং কথা কাটাকাটি লেগেই থাকত। আর ড্র হলে তো ছেড়েই দিন। ‘পরের টায় দেখে নেবো তোদের’ বলে হুঙ্কার এবং আরও ঝামেলা তাই নিয়ে। তবু ক্লাস টেন অবধি রোজ ওর পাশেই বসতাম। এত পার্থক্য এর মাঝেও কিছু মিল ছিল হয়তো।
আজ প্রায় ৮ বছর হতে চলল ক্লাস টেন পাস করেছি। তিন বন্ধুই আজ নিজেদের মতন করে সমাজে প্রতিষ্ঠিত।
সর্বেস্বর, সমীরণ এর সাথে যোগাযোগ থাকেলেও রোহন এর সাথে প্রায় নেই বললেই চলে। তবে, ফেসবুক থেকে জন্মদিন এর ডেট সরিয়ে দেওয়ার পরেও ওর থেকে উইশ পাই একদম সকাল দশটার মধ্যে। স্কুল জীবনে যাদের ভেবে ছিলাম আমার জগৎ, তারা আজ প্রত্যেকেই নিজের নিজের ভিন্ন জগতে বিরাজমান। ভিন্ন ভিন্ন এই জগতের পথচারী বন্ধুরা স্মৃতির সরণী বেয়ে আবার একই জগতের বাসিন্দা।
Mark Knopfler হয়তো এক শ্বাশত সত্য ই বলে গেছেন: “There’s so many different worlds….”

4 thoughts on “অন্য জগৎ

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Twitter picture

You are commenting using your Twitter account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s